আরিফ গাজী :
কুমিল্লার মুরাদনগরে রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে মাটি কাটার অজুহাতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ভূক্তভোগিরা এলাকায় মুখ খোললেও ভয়ে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে না কেউ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন বলিঘর-সাহেদাগোপ রাস্তার ১৫শ’ মিটার সড়ক পাকা করার জন্য এলজিইডি থেকে টেন্ডার আহবান করা হয়। কাজটি পায় মেসার্স কামাল উদ্দিন। যার সরকারি ভাবে নির্মাণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা।
এ কাজ করতে গিয়ে ঠিকাদার কামাল উদ্দিন রাস্তা নির্মাণে ব্যবহৃত বালুর দায়িত্ব দেন শ্রীকাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি শাহ জালালকে। শাহ জালাল অন্য স্থান থেকে বালু এনে দেয়ার কথা থাকলেও সে রাস্তার পাশের বাড়িগুলো থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটতে যায়।
এ সময় স্থানীয়রা বাঁধা প্রদান করলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি ও হামলা-মামলার ভয় দেখানো হয়। পরে ড্রেজার ব্যবসায়ী ওই যুবলীগ নেতা শাহজালালের সহযোগিতায় প্রায় ২০টি পরিবারের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
ভূক্তভোগি শ্রীকাইল ইউনিয়নের সাহেদাগোপ গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, রাস্তার পাশে আমাদের একই পরিবারের শাহআলম, কাজল ও নাজমার ৩টি বাড়ি রয়েছে। কিছুদিন আগে রাস্তার কাজ করতে গিয়ে ভেকু দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে মাটি কাটতে আসে শাহজালাল।
পরে আমরা কাকুতি মিনতি করে বলার পর সে আমাদেরকে প্রস্তাব দেয় যদি বাড়ি প্রতি ৫৫ হাজার টাকা করে দেই, তাহলে অন্য জায়গা থেকে মাটি আনবে। পরে ঘর বাড়ি বাচাঁতে কেউ স্বর্ণের অলংকার বিক্রি, আবার কেউ ফসলি জমি বন্ধক দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে শাহজালালকে দেওয়া হয়। শুধু আমরাই না, এ রাস্তার পাশে যত বাড়ি আছে যে টাকা দিতে পারেনি তার বাড়ি থেকে মাটি নেওয়া হয়েছে।
আর যে টাকা দিয়েছে তার বাড়ি থেকে মাটি নেওয়া হয়নি। একই ভাবে ওই গ্রামের রমজান ও মতিন বলেন, আমরা নিরীহ মানুষ, টাকা না দিলে ভেকু দিয়ে বাড়ি থেকে মাটি কাইট্টা লইয়া যাইতো, কি করমু বাধ্য হইয়া টাকা দিয়া দিছি। লিখিত অভিযোগের কথা বললে তারা বলেন, এমনিতেই তাদের ভয়ে আমরা আতংকে আছি। লিখিত অভিযোগ দিয়া কি বাড়ি ছাড়া হমু।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা শাহজালাল বলেন, আমি ঠিকাদার কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে মাটি ভরাটের কাজ পেয়েছি। রাস্তার পাশের অধিকাংশ বাড়িগুলো সরকারি খাস জমিতে রয়েছে। সেখান থেকে মাটি কাটতে গেলে স্থানীয়রা আমাকে বাধাঁ দেয়। পরে আমি ঠিকাদার কামাল উদ্দিনকে জানালে তিনি বাড়ির মালিকদের সাথে রফাদফা করে আমাকে বলেন, তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে রাস্তার কাজ করার জন্য। এখানে আমার কোন স্বার্থ নেই, ঠিকাদারের কথায় আমি টাকা নিয়েছি।
ঠিকাদার কামাল উদ্দিন টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, রাস্তায় বালু ফেলে এক ফুট উচু করার জন্য আমি শাহজালালের সাথে চুক্তি করেছি। আমার কাজ টাকা দেওয়া। শাহজালাল কোথা থেকে মাটি দিবে সেটি তার ব্যাপার। বাড়ি থেকে মাটি কাটা কিংবা মাটি না পেলে টাকা আদায় করার বিষয়টি আমার জানা নেই।
উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর কবির বলেন, রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে যদি মাটি সংগ্রহ করতে অসুবিধা হয়, তাহলে আমার অফিস এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদের মাধ্যমে সেটি সূরাহা করা হয়। যদি কেউ নিজে নিজে টাকার বিনিময়ে কোন কিছুর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে সেটি অন্যায় করেছে। এ বিষয়ে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে তদন্ত করে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।